যাকাত সম্পর্কিত বিবিধ মাসায়েল

. .যাকাত সম্পর্কিত বিবিধ মাসায়েল

মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব

 (শেষ কিস্তি)

যাকাতুল ফিতর

আল্লাহ তা‘আলা সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য আনন্দ ও খুশির দিন হিসাবে ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহা নামক দু’টি দিন নির্ধারণ করেছেন। ঈদুল ফিৎরের খুশির দিনে ধনীদের সাথে গরীবরাও যেন সমানভাবে আনন্দ ও খুশিতে শরীক হ’তে পারে সেজন্য মুসলমানদের উপর যাকাতুল ফিৎর ফরয করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى ‘অবশ্যই সাফল্য লাভ করবে, যে যাকাত (যাকাতুল ফিতর) আদায় করবে’ (আ‘লা ৮৭/১৪)। হাদীছে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِيْنِ مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ فَهِىَ زَكَاةٌ مَقْبُوْلَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاَةِ فَهِىَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ-

ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিৎর ফরয করেছেন ছিয়াম পালনকারীর অসারতা ও যৌনাচারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকীনদের খাদ্য স্বরূপ। যে ব্যক্তি তা ছালাতের পূর্বে (ঈদের ছালাত) আদায় করবে তা যাকাত হিসাবে গ্রহণীয় হবে। আর যে ব্যক্তি ছালাতের পরে আদায় করবে তা (সাধারণ) ছাদাক্বার মধ্যে গণ্য হবে।[1]

অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما قَالَ فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ عَلَى الْعَبْدِ وَالْحُرِّ، وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى، وَالصَّغِيْرِ وَالْكَبِيْرِ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ، وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوْجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ-

ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিৎর হিসাবে মুসলমানদের ছোট-বড়, পুরুষ-নারী এবং স্বাধীন-দাস প্রত্যেকের উপর এক ছা খেজুর অথবা এক ছা যব ফরয করেছেন এবং তিনি ছালাতের উদ্দেশ্যে লোকেদের বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।[2]

যাকাতুল ফিৎর ফরয হওয়ার জন্য নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া শর্ত কি? যাকাতুল ফিৎর ফরয হওয়ার জন্য নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া শর্ত নয়। কেননা যাকাতুল ফিৎর ব্যক্তির উপর ফরয; মালের উপর ফরয নয়। মালের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। মালের কম-বেশীর কারণে এর পরিমাণ কম-বেশী হবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিৎর হিসাবে মুসলমানদের ছোট-বড়, পুরুষ-নারী এবং স্বাধীন-ক্রীতদাস প্রত্যেকের উপর এক ছা খেজুর অথবা এক ছা জব ফরয করেছেন।[3]

অত্র হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছোট ও ক্রীতদাসের উপর যাকাতুল ফিৎর ফরয বলে উল্লেখ করেছেন। যাকাতুল ফিৎর ফরয হওয়ার জন্য নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া শর্ত হ’লে, ছোট ও ক্রীতদাসের উপর যাকাত ফরয হ’ত না। কেননা সবেমাত্র জন্ম গ্রহণ করা সন্তানও ছোটদের অন্তর্ভুক্ত, যার নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। অনুরূপভাবে দাস সাধারণত নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় না। এজন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দাসের উপর যাকাতুল ফিৎর ব্যতীত তার সম্পদের যাকাত ফরয করেননি। যেমন হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَيْسَ فِيْ الْعَبْدِ صَدَقَةٌ إِلاَّ صَدَقَةُ الْفِطْرِ-

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছাদাক্বাতুল ফিৎর ব্যতীত ক্রীতদাসের উপর কোন ছাদাক্বা (যাকাত) নেই’।[4]

এছাড়াও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ধনী-গরীব সকলের উপর যাকাতুল ফিৎর ফরয বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,

أَدُّوْا عَنْ كُلِّ إِنْسَانٍ صَاعًا مِنْ بُرٍّ عَنِ الصَّغِيْرِ وَالْكَبِيْرِ وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى وَالْغَنِىِّ وَالْفَقِيْرِ فَأَمَّا الْغَنِىُّ فَيُزَكِّيْهِ اللهُ وَأَمَّا الْفَقِيْرُ فَيَرُدُّ اللهُ عَلَيْهِ أَكْثَرَ مِمَّا أَعْطَى-

‘মানুষের মধ্যে প্রত্যেক ছোট-বড়, পুরুষ-নারী, ধনী-গরীবের নিকট থেকে এক ছা‘ গম (যাকাতুল ফিৎর) আদায় কর। আর ধনী, যাকে আল্লাহ এর বিনিময়ে পবিত্র করবেন। আর ফকীর, যাকে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার প্রদানকৃত যাকাতুল ফিৎরের অধিক ফিরিয়ে দিবেন’।[5]

যা দ্বারা যাকাতুল ফিৎর আদায় বৈধ

মুসলমানদের উপর যেমন যাকাতুল ফিৎর ফরয করা হয়েছে। তেমনি তা কি দ্বারা আদায় করবে তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَدُّوْا صَاعًا مِنْ طَعَامٍ فِي الْفِطْرِ ‘তোমরা ছাদাক্বাতুল ফিৎর আদায় কর এক ছা‘ খাদ্যদ্রব্য দ্বারা’।[6] অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ رضى الله عنه يَقُوْلُ كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ أَقِطٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيْبٍ-

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ‘আমরা এক ছা‘ ত্বা‘আম বা খাদ্য অথবা এক ছা‘

 যব অথবা এক ছা‘ খেজুর অথবা এক ছা‘ পনির অথবা এক ছা‘ কিশমিশ থেকে যাকাতুল ফিৎর বের করতাম’। [7]

অত্র হাদীছে যাকাতুল ফিৎর প্রদানের ব্যাপারে বিভিন্ন খাদ্যশস্যের নাম সহ সাধারণভাবে ‘ত্বা‘আম’ বা খাদ্যের কথা এসেছে, যা দ্বারা পৃথিবীর ঐ সকল খাদ্যশস্যকে বুঝানো হয়েছে, যা মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রধান খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। হাদীছে সরাসরি চাউলের কথা উল্লেখ না থাকলেও তা যে ‘ত্বা‘আম’ বা খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ধান খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা ধান মানুষের সরাসরি খাদ্য নয়। যবের উপরে ধানের ক্বিয়াস করা যাবে না। কেননা যব খোসা সহ পিষে খাওয়া যায়। কিন্তু ধান খোসা সহ পিষে খাওয়া যায় না। সুতরাং বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য হিসাবে চাউল দ্বারা ফিৎরা প্রদান করাই শরী‘আত সম্মত।

টাকা দিয়ে যাকাতুল ফিৎর আদায় করা বৈধ কি?

টাকা দ্বারা ফিৎরা আদায়ের রীতি ইসলামের সোনালী যুগে ছিল না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম টাকা দ্বারা ফিৎরা আদায় করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা বাজারে চালু থাকা সত্ত্বেও তিনি খাদ্য বস্ত্ত দ্বারা ফিৎরা আদায় করেছেন, আদায় করতে বলেছেন এবং বিভিন্ন শস্যের কথা হাদীছে উল্লেখ রয়েছে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ‘আমরা এক ছা‘ ত্বা‘আম বা খাদ্য, অথবা এক ছা যব, অথবা এক ছা খেজুর, অথবা এক ছা পনির, অথবা এক ছা কিশমিশ থেকে যাকাতুল ফিৎর বের করতাম।[8] ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিৎর হিসাবে মুসলমানদের ছোট-বড়, পুরুষ-নারী এবং স্বাধীন-দাস প্রত্যেকের উপর এক ছা‘ খেজুর অথবা এক ছা‘ যব ফরয করেছেন এবং তিনি ছালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।[9]

অতএব খাদ্যশস্য দ্বারা ‘যাকাতুল ফিৎর’ আদায় করাই ইসলামী শরী‘আতের বিধান। টাকা-পয়সা দ্বারা ফিৎরা প্রদান করা তার পরিপন্থী। ছায়েম নিজে যা খান, তা থেকেই ফিৎরা দানের মধ্যে অধিক মহববত নিহিত থাকে। যে ব্যক্তি ২০ টাকা কেজি দরের চাউল খান সে উক্ত মানের চাউল এক ছা‘ ফিৎরা দিবেন। আর যে ব্যক্তি ৫০ টাকা কেজি দরের চাউল খান সে উক্ত মানের চাউল এক ছা‘ ফিৎরা দিবেন। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে টাকা-পয়সার দ্বারা ফিৎরা আদায়ের ফলে একজন রিক্সা চালক যে ২০ টাকা কেজি দরের চাউল খায়, আর একজন দেশের মন্ত্রী যে ৭০-১০০ টাকা কেজি দরের চাউল খান, উভয়ের যাকাতুল ফিৎরের মান সমান হয়ে যায়। অর্থাৎ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত টাকা দ্বারা রাজা প্রজা সকলেই ফিৎরা আদায় করে থাকে। যা ইসলাম ও মানুষের বিবেক বিরোধী।

যাকাতুল ফিৎরের পরিমাণ

যাকাতুল ফিৎর হিসাবে কি পরিমাণ খাদ্যশস্য দিতে হবে তার স্পষ্ট বর্ণনা হাদীছে এসেছে,

فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ عَلَى الْعَبْدِ وَالْحُرِّ، وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى، وَالصَّغِيْرِ وَالْكَبِيْرِ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ-

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিৎর হিসাবে মুসলমানদের ছোট-বড়, পুরুষ-নারী এবং স্বাধীন-দাস প্রত্যেকের উপর এক ছা‘ খেজুর অথবা এক ছা‘ যব ফরয করেছেন।[10]

অতএব প্রত্যেক মুসলিমকে যাকাতুল ফিৎর হিসাবে এক ছা‘ খাদ্যশস্য প্রদান করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে অর্ধ ছা‘ ফিৎরা প্রদানের যে প্রচলন রয়েছে তা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। সর্বপ্রথম মু‘আবিয়া (রাঃ) কোন এক প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র গমের ক্ষেত্রে অর্ধ ছা‘ ফিৎরা আদায়ের প্রচলন ঘটিয়েছিলেন। আর এটা ছিল মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর ইজতিহাদ যা আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) সহ অন্যান্য ছাহাবায়ে কেরাম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। হাদীছটি নিম্নরূপ-

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ كُنَّا نُخْرِجُ إِذْ كَانَ فِيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ عَنْ كُلِّ صَغِيْرٍ وَكَبِيْرٍ حُرٍّ أَوْ مَمْلُوْكٍ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ أَوْ صَاعًا مِنْ أَقِطٍ أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيْبٍ فَلَمْ نَزَلْ نُخْرِجُهُ حَتَّى قَدِمَ عَلَيْنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِيْ سُفْيَانَ حَاجًّا أَوْ مُعْتَمِرًا فَكَلَّمَ النَّاسَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَكَانَ فِيْمَا كَلَّمَ بِهِ النَّاسَ أَنْ قَالَ إِنِّيْ أُرَى أَنَّ مُدَّيْنِ مِنْ سَمْرَاءِ الشَّامِ تَعْدِلُ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ فَأَخَذَ النَّاسُ بِذَلِكَ. قَالَ أَبُوْ سَعِيْدٍ فَأَمَّا أَنَا فَلاَ أَزَالُ أُخْرِجُهُ كَمَا كُنْتُ أُخْرِجُهُ أَبَدًا مَا عِشْتُ-

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন যে, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় প্রত্যেক ছোট-বড়, স্বাধীন-দাস এক ছা‘ করে খাদ্যবস্ত্ত অথবা এক ছা‘ পনির অথবা এক ছা‘ যব অথবা এক ছা‘ খেজুর অথবা এক ছা‘ কিশমিশ ‘যাকাতুল ফিৎর’ হিসাবে আদায় করতাম। আমরা এরূপভাবেই (যাকাতুল ফিৎর) বের করতাম। এমন সময় মু‘আবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) হজ্জ বা ওমরাহ উপলক্ষে মদীনায় এলেন। (তাঁর সঙ্গে সিরিয়ার গমও এল)। তিনি মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে জনগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আমি মনে করি সিরিয়ার দুই মুদ (অর্ধ ছা‘) গম (মূল্যের দিক দিয়ে) মদীনার এক ছা‘ খেজুরের সমতুল্য। অতঃপর লোকজন তা গ্রহণ করল। তখন আবুসাঈদ খুদরী (রাঃ) বললেন, ‘আমি যতদিন দুনিয়ায় বেঁচে থাকব ততদিন তা (অর্ধ ছা‘ গমের ফিৎরা) কখনোই আদায় করব না। বরং (রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায়) আমি যা দিতাম তাই-ই দিয়ে যাব’।[11]

একদা আবুসাঈদ খুদরী (রাঃ) যাকাতুল ফিৎর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,

لاَ أُخْرِجُ إِلاَّ مَا كُنْتُ أُخْرِجُ فِيْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه و سلم صَاعَ تَمْرٍ أَوْ صَاعَ شَعِيْرٍ أَوْ صَاعَ أَقِطٍ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ مِنَ القَوْمِ : لَوْ مُدَّيْنِ مِنْ قَمْحٍ ؟ فَقَالَ : لاَ تِلْكَ قِيْمَةُ مُعَاوِيَةَ لاَ أَقْبَلُهَا وَلاَ أَعْمَلُ بِهَا-

অর্থাৎ আমি রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় যেমন এক ছা‘ খেজুর অথবা এক ছা‘ যব অথবা এক ছা‘ পনির হ’তে যাকাতুল ফিৎর বের করতাম, কখনোই এর ব্যতিক্রম বের করব না। তখন গোত্রের কোন এক ব্যক্তি বললেন, যদি অর্ধ ছা‘ গম দ্বারা হয়? তিনি বললেন, না; এটা মু‘আবিয়া (রাঃ) কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য। আমি তা মানব না এবং তার উপর আমলও করব না।[12]

বুখারীর ভাষ্যকার হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,

فِيْ حَدِيْثِ أَبِيْ سَعِيْدٍ مَا كَانَ عَلَيْهِ مِنْ شِدَّةِ الِاتِّبَاعِ وَالتَّمَسُّكِ بِالْآثَارِ وَتَرْكِ الْعُدُوْلِ إِلَى الِاجْتِهَادِ مَعَ وُجُوْدِ النَّصِّ وَفِيْ صَنِيْعِ مُعَاوِيَةَ وَمُوَافَقَةِ النَّاسِ لَهُ دَلَالَةٌ عَلَى جَوَازِ الِاجْتِهَادِ وَهُوَ مَحْمُوْدٌ لَكِنَّهُ مَعَ وُجُوْدِ النَّصِّ فَاسد الإِعْتِبَارِ-

অর্থাৎ উল্লিখিত হাদীছে নাছ বা দলীলের উপস্থিতিতে ইজতিহাদ বর্জন করার মাধ্যমে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর হাদীছ ধারণের দৃঢ়তা ও পূর্ণ ইত্তিবা প্রমাণিত হয়। আর মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর ইজতিহাদ এবং মানুষের তা গ্রহণ করার মাধ্যমে ইজতিহাদ জায়েয হওয়া প্রমাণ করে যা প্রশংসনীয়। কিন্তু যেখানে দলীল উপস্থিত সেখানে ইজতিহাদ অগ্রহণীয়।[13]

মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম মুহিউদ্দীন নববী (৬৩১-৬৭৬ হিঃ) বলেন, وَلَيْسَ لِلْقَائِلَيْنِ بِنِصْفِ صَاع حُجَّة إِلَّا حَدِيْثَ مُعَاوِيَةَ ‘যারা অর্ধ ছা‘ গমের কথা বলেন, তাদের মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর এই হাদীছ ব্যতীত কোন দলীল নেই।[14]

অতএব স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, অর্ধ ছা‘ গম দ্বারা ফিৎরা আদায় করা মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর নিজস্ব রায় মাত্র, রাসূল (ছাঃ)-এর উক্তি নয়। যাকে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) সহ অন্যান্য ছাহাবায়ে কেরাম প্রত্যাখ্যান করে রাসূল (ছাঃ)-এর উক্তি ও আমল এক ছা‘ খাদ্যবস্ত্ত দ্বারা ফিৎরা আদায়ের উপর অটল ছিলেন। কেননা দলীল মওজূদ থাকতে ‘ইজতিহাদ’ বাতিল বলে গণ্য হয়। তাছাড়া হাদীছে যেসব খাদ্যদ্রব্যের নাম এসেছে তার সবগুলির মূল্য এক ছিল না। বরং মূল্যে পার্থক্য ছিল। তা সত্ত্বেও সকল খাদ্যদ্রব্য থেকে এক ছা‘ করে যাকাতুল ফিৎর আদায় করতে বলা হয়েছে। এতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খাদ্যদ্রব্যের মূল্যের প্রতি দৃকপাত না করে তার পরিমাণ বা ওযনকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিপরীতে স্বয়ং রাষ্ট্রীয় আমীরের হুকুমকে ছাহাবায়ে কেরাম অগ্রাহ্য করেছেন শুধুমাত্র হাদীছের সার্বভৌম অধিকারকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। অনুরূপভাবে আমাদেরও উচিত হবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সার্বভৌম অধিকারকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাথা পিছু এক ছা‘ ফিৎরা আদায় করা।

যাকাতুল ফিৎর আদায়ের সময়

রামাযান শেষে শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের পর থেকে ঈদের মাঠে গমনের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে যাকাতুল ফিৎর আদায় করতে হবে। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন,

وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوْجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ-

তিনি (রাসূল (ছাঃ) ছালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।[15]

উল্লিখিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) زَكَاةُ الْفِطْرِনামকরণ করেছেন; زَكَاةُ رَمَضَان নামকরণ করেননি। আর ফিৎর আরম্ভ হয় রামাযান শেষে শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের পর থেকে।[16] অতএব শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের পর থেকে ঈদের মাঠে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময় যাকাতুল ফিৎর আদায়ের প্রকৃত সময়। তবে প্রয়োজনে এক অথবা দু’দিন পূর্বে থেকে যকাতুল ফিৎর আদায় করা যায়। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) ঈদুল ফিৎরের এক অথবা দু’দিন পূর্বে ফিৎরা আদায় করেছেন। হাদীছে এসেছে,

كَانَ ابْنُ عُمَرَ رضى الله عنهما يُعْطِيْهَا الَّذِيْنَ يَقْبَلُوْنَهَا، وَكَانُوْا يُعْطُوْنَ قَبْلَ الْفِطْرِ بِيَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ-

ইবনু ওমর (রাঃ) জমাকারীদের নিকট ছাদাক্বাতুল ফিৎর প্রদান করতেন। আর তারা ঈদুল ফিৎরের একদিন অথবা দু’দিন পূর্বে তা আদায় করত।[17]

ছহীহ ইবনু খুযায়মাতে আব্দুল ওয়ারেছের সূত্রে আইয়ূব থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল,

مَتَى كَانَ ابْنُ عُمَرَ يُعْطِي الصَّاعَ؟ قَالَ إِذَا قَعَدَ الْعَامِلُ، قُلْتُ مَتَى كَانَ الْعَامِلُ يَقْعُدُ؟ قَالَ قَبْلَ الْفِطْرِ بِيَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ-

ইবনু ওমর (রাঃ) ছাদাক্বাতুল ফিৎর কখন প্রদান করতেন? তিনি বললেন, আদায়কারী বসলে। তিনি আবার বললেন, আদায়কারী কখন বসতেন? তিনি বললেন, ঈদের ছালাতের একদিন বা দু’দিন পূর্বে।[18]

অতএব শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের পর থেকে ঈদের মাঠে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যাকাতুল ফিৎর জমাকারীর নিকট জমা করতে হবে। প্রয়োজনে এক দিন অথবা দু’দিন পূর্বে জমা করা জায়েয। উক্ত জমাকৃত যাকাতুল ফিৎর ঈদের ছালাতের পরে হকদারদের মাঝে বণ্টন করতে হবে। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, كَانُوْا يُعْطُوْنَ لِلْجَمْعِ لاَ لِلْفُقَرَاءِ ‘তাঁরা জমা করার জন্য দিতেন, ফকীরদের জন্য নয়’।[19]

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, وَكَّلَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ ‘রাসূলুল্লাহ আমাকে রামাযানের যাকাত রক্ষার বা হেফাযতের দায়িত্ব প্রদান করেন’।[20] যা দ্বারা বুঝা যায় যে, তিনি জমাকৃত ছাদাক্বাতুল ফিৎর পাহারা দিচ্ছিলেন। যা বণ্টন হয়েছিল ঈদের ছালাতের পরে।[21]

অতএব ঈদের ছালাতের পূর্বে যাকাতুল ফিৎর বণ্টনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাছাড়া উল্লিখিত সংক্ষিপ্ত সময়ে যাকাতুল ফিৎর জমা করে ঈদের ছালাতের পূর্বে বণ্টন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আর কষ্ট সর্বদা সহজতা অন্বেষণ করে। তাই ঈদের ছালাতের পূর্বে জমা করে ঈদের ছালাতের পরে বণ্টন করলে মানুষের জন্য সহজ হয়। সুতরাং সামাজিকভাবে যাকাতুল ফিৎর জমা করার ব্যবস্থা থাকলে ঈদের পূর্বে জমা করে ঈদের ছালাতের পরে বণ্টন করতে হবে। আর জমা করার ব্যবস্থা না থাকলে ব্যক্তিগতভাবে ঈদের ছালাতের পূর্বে ফকীর-মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করবে।

যাকাতুল ফিৎর বণ্টনের খাত সমূহ

যাকাতুল ফিৎর বণ্টনের খাত নিয়ে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে ছহীহ মত হ’ল, যাকাতুল ফিৎর আল্লাহ নির্দেশিত যাকাত থেকে আলাদা নয়। আর আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে যাকাত বণ্টনের ৮টি খাত উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِيْ الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِ فَرِيْضَةً مِنَ اللهِ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ-

‘নিশ্চয়ই ছাদাক্বা (যাকাত) হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্ল­াহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্ল­াহর পক্ষ হ’তে’ নির্ধারিত, আর আল্লাহ  মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়’ (তাওবা ৯/৬০)। তবে ফকীর ও মিসকীন যাকাতুল ফিৎরের অধিক হকদার। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিতরকে طُعْمَةً لِلْمَسَاكِيْنِ তথা মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ ফরয করার কথা উল্লেখ করেছেন। রাসূল (ছাঃ)-এর এই বাণী যাকাতুল ফিতরকে শুধুমাত্র ফকীর-মিসকীনের জন্য খাছ বা নির্দিষ্ট করে দেয় না। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল, যাকাতুল ফিৎরের মধ্যে ফকীর-মিসকীনের খাদ্য নিহীত রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার ও মানার তাওফীক দান করুন- আমীন!

[1]. আবুদাউদ হা/১৬০৯; ইবনু মাজাহ হা/১৮২৭; আলবানী, সনদ হাসান।

[2]. বুখারী হা/১৫০৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাকাতুল ফিৎর’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/১৮১৫।

[3]. বুখারী হা/১৫০৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাকাতুল ফিৎর’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/১৮১৫।

[4]. মুসলিম হা/৯৮২; মিশকাত হা/১৭৯৫।

[5]. দারাকুতনী হা/২১২৭।

[6]. ছহীহুল জামে‘ হা/২৪২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১১৭৯।

[7]. বুখারী হা/১৫০৬; মুসলিম হা/৯৮৫; মিশকাত হা/১৮১৬।

[8]. বুখারী হা/১৫০৬; মুসলিম হা/৯৮৫; মিশকাত হা/১৮১৬।

[9]. বুখারী হা/১৫০৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাকাতুল ফিৎর’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/১৮১৫।

[10]. বুখারী হা/১৫০৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাকাতুল ফিৎর’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/১৮১৫।

[11]. বুখারী হা/১৫০৮; মুসলিম হা/৯৮৫।

[12]. ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/২৪১৯; মুস্তাদরাক হাকেম হা/১৪৯৫; আল-আ‘যামী, সনদ হাসান।

[13]. ফাতহুল বারী ৩/৩৭৪ পৃঃ, ১৫০৮ নং হাদীছের ব্যাখ্যা।

[14]. শারহু মুসলিম, ইমাম নববী (রহঃ) ৩/৪৪৭ পৃঃ, ৩৮৪ নং হাদীছের ব্যাখ্যা।

[15]. বুখারী হা/১৫০৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাকাতুল ফিতর’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/১৮১৫।

[16]. মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৬/১৬৬ পৃঃ।

[17]. বুখারী হা/১৫১১, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাকাতুল ফিতর’ অনুচ্ছেদ।

[18]. ছহীহ ইবনু খাযায়মা হা/২৩৯৭; আলবানী, সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৮৪৬।

[19]. ফাতহুল বারী (বৈরুত : দারুল মা‘রেফা), ৩/৩৭৬ পৃঃ ।

[20]. বুখারী হা/২৩১১; ফাতহুল বারী,  ৩/৩৭৬ পৃঃ ।

[21]. ইরওয়াউল গালীল, ৩/৩৩২-৩৩ পৃঃ।

Credit : Monthly At-Tahreek

 

ইসলামের আলোকে নববর্ষ বা থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন


সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি আমাদেরকে সর্বোত্তম দীনের অনুসারী ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের উম্মত হওয়ার তাওফিক দান করেছেন। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মদ ইব্‌ন আব্দুল্লাহর উপর, যিনি আমাদেরকে কল্যাণকর সকল পথ বাতলে দিয়েছেন এবং সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে সতর্ক করেছেন। আরো সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তার পরিবারবর্গ ও সাথীদের উপর, যারা তার আনীত দীন ও আদর্শকে যথাযথভাবে পরবর্তী উম্মতের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা তাদের সুন্দরভাবে অনুসরণ করবে সবার উপর। অতঃপর:

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«بَادِرُوا بِالأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ، يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا، وَيُمْسِي كَافِرًا، أَوْ يُمْسِي مُؤْمِنًا، وَيُصْبِحُ كَافِرًا، يَبِيعُ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا»

“তোমরা অন্ধকার রাতের ঘনঘটার ন্যায় ফেতনার পূর্বে দ্রুত আমল কর, [যখন] ব্যক্তি ভোর করবে মুমিন অবস্থায়, সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়; অথবা সন্ধ্যা করবে মুমিন অবস্থায়, ভোর করবে কাফির অবস্থায়। মানুষ তার দীনকে বিক্রি করে দিবে দুনিয়ার সামান্য বিনিময়ে”।[1] 
আমরা বর্তমান ফেতনার সে অন্ধকারে বাস করছি, আমাদের চারপাশে ঘোর অন্ধকার: মূর্খতার অন্ধকার, কুসংস্কারের অন্ধকার, বিদআতের অন্ধকার, শিরকের অন্ধকার, সঠিক পথ খুজে পাওয়া দুষ্কর। বিশেষ করে ইহুদি-খৃস্টান ও কাফেরদের সংস্কৃতি আমাদের ঘ্রাস করে রেখেছে। আমরা তাতে গভীরভাবে মগ্ন হয়ে পড়েছি। নিজেদের দীন ও আদর্শের পরিবর্তে তাদের কালচার ও আবিষ্কৃত উপলক্ষে মেতে আছি। উম্মতের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার আশঙ্কা করেছেন এবং যার থেকে তিনি উম্মতকে বারবার সতর্ক করেছেন।

আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ، حَتَّى لَوْ دَخَلُوا فِي جُحْرِ ضَبٍّ لَاتَّبَعْتُمُوهُمْ، قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، آلْيَهُودَ، وَالنَّصَارَى، قَالَ: فَمَنْ».

“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের রাস্তা অনুসরণ করবে বিঘতে বিঘতে ও হাতে হাতে; তারা যদি গুঁইসাপের গর্তে ঢুকে তোমরা অবশ্যই তাদের অনুসরণ করবে; আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, ইহুদি ও খৃস্টান? তিনি বললেন: তবে কে”?[2] 
ইমাম নববি রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে ও গুঁইসাপের গর্তের উদাহরণ পেশ করার অর্থ কঠিনভাবে তাদের অনুসরণ করা। এ অনুসরণ অর্থ কুফরি নয়, বরং পাপাচার ও ইসলামের বিরোধিতায় তাদের অনুকরণ করা উদ্দেশ্য। এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্পষ্ট মুজিজা, তিনি যার সংবাদ দিয়েছেন আমরা তা চাক্ষুষ দেখছি”।[3]

ইব্‌ন কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “আমাদের পূর্ববর্তী কিতাবিদের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ শরিয়তে নিষিদ্ধ কর্ম সম্পর্কে সংঘটিত হওয়ার পূর্বে সংবাদ দেয়ার অর্থ আমাদেরকে তাদের কথা ও কর্মের সাদৃশ্য গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করা। কোন মুমিনের উদ্দেশ্য এতে ভালো হলেও বাহ্যিকভাবে তাদের মিল প্রকৃত অর্থে তাদের কর্ম হিসেবে গণ্য হবে”।[4]

মুনাবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক মুজিজা। আজ তার উম্মতের বড় এক গোষ্ঠী কৃষ্টি-কালচার, যানবাহন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও যুদ্ধ ইত্যাদির নীতিতে পারস্যের অনুসরণ করছে। আবার ইহুদি-খৃস্টানদের আনুগত্য করছে মসজিদ সজ্জিত করা, কবরকে অধিক সম্মান করা, যার ফলে মূর্খরা তার ইবাদতে মগ্ন হয়েছে, ঘুষ গ্রহণ করা, দুর্বলদের শাস্তি দেয়া ও সবলদের ক্ষমা করা, জুমার দিন কর্ম ত্যাগ করে ছুটি কাটানো ইত্যাদি বিষয়ে”।[5]

এ যুগে তাদের অন্ধানুকরণ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে পার্থিব শৌর্য-বীর্য ও বৈজ্ঞানিক উন্নতির ফলে তারা রীতিমত অনেক মুসলিমের জন্য ফেতনায় পরিণত হয়েছে। ইলেকট্রিক প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ঘরে ঘরে নিমিষে পৌঁছে যাচ্ছে তাদের আচার-অনুষ্ঠান। তারা যাই করে মুসলিমের একাংশ তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। তাদের উৎসব, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো উপভোগ করে, তাতে যোগ দেয় ও আনন্দ করে। কি নববর্ষ, কি মৃত্যু বার্ষিকী, কি জন্ম বার্ষিকী, কি বিবাহ বার্ষিকী, কি বাবা দিবস, কি মা দিবস, কোন কিছুতেই কুণ্ঠাবোধ নেই। তারা করছে তাই আমরা করছি। ভালো-মন্দ, বৈধ-অবৈধ ও কুফর-শিরক ভেবে দেখার ফুরসত নেই। তারা দীন থেকে দূরে সরে গেছে, ভুলে গেছে ইসলামী আদর্শ ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:

«مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ»

“যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত”।[6] 
এতো কঠোর হুশিয়ারি সত্বেও মুসলিম তাদের অনুসরণে ঘটা করে প্রতিবছর “থার্টিফাস্ট” উদযাপন করে। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«غَيِّرُوا الشَّيْبَ، وَلَا تَشَبَّهُوا بِالْيَهُودِ»

“তোমরা বার্ধক্যকে পরিবর্তন কর, কিন্তু ইহুদিদের সাথে মিল রেখ না”।[7] 
ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ، أَحْفُوا الشَّوَارِبَ، وَأَوْفُوا اللِّحَى»

“তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর, মুছ ছোট কর ও দাঁড়ি লম্বা কর”।[8] 
ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “আল্লাহর কিতাব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত, খোলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শ ও সকল আলেম একমত যে, মুশরিকদের বিরোধিতা করতে হবে এবং তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা যাবে না”।[9] কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে কোন কওমের সাথে সামঞ্জস্য রাখল, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত”।[10]এ প্রসঙ্গে ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এ হাদিসের সর্বনিম্ন দাবি তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা হারাম, যদিও হাদিসের বাহ্যিক অর্থের দাবি কুফরি”।[11] 
ইব্‌নুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এর রহস্য বাহ্যিক সাদৃশ্য মানুষকে নিয়ত ও আমলের সাদৃশ্যের দিকে ধাবিত করে”।[12] তিনি আরো বলেন: “কিতাবি ও অন্য কাফেরদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা থেকে একাধিক জায়গায় নিষেধাজ্ঞা এসেছে, কারণ বাহ্যিক সামঞ্জস্য আভ্যন্তরীণ সামঞ্জস্যের দিকে ধাবিত করে, যখন আদর্শের সাথে আদর্শ মিলে যায়, তখন অন্তরের সাথে অন্তর মিলে যায়”।[13] 
সানআনি রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এ হাদিস প্রমাণ করে যে ব্যক্তি ফাসেক অথবা কাফের অথবা বিদআতির সাথে পোশাক অথবা যানবাহন অথবা কোন বিষয়ে মিল রাখল, যা তাদের নিদর্শন, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। ফকিহগণ বলেছেন: কেউ যদি কাফেরদের সাথে মিল রেখে তাদের মত হওয়ার বিশ্বাস পোষণ করে, তাহলে সে কাফের। আর এ বিশ্বাস পোষণ না করলে তারা ইখতিলাফ করেছেন। কেউ বলেছেন: কাফের, হাদিসের বাহ্যিক দাবি তাই। কেউ বলেছেন: কাফের বলা হবে না, বরং তাকে শাস্তি দেয়া হবে”।[14]

নববর্ষ উদযাপন করা হারাম

বাংলা নববর্ষ ‘পহেলা বৈশাখ’, ইংরেজি নববর্ষ ‘থার্টিফাস্ট’ কিংবা হিজরি নববর্ষ পালন করা হারাম। 
ইব্‌ন কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “কোন মুসলিমের সুযোগ নেই কাফেরদের সামঞ্জস্য গ্রহণ করা, না তাদের ধর্মীয় উৎসবে, না মৌসুমি উৎসবে, না তাদের কোন ইবাদতে। কারণ আল্লাহ তাআলা এ উম্মতকে সর্বশেষ নবী দ্বারা সম্মানিত করেছেন, যাকে পরিপূর্ণ ও সর্বব্যাপী দীন দেয়া হয়েছে। যদি মূসা ইব্‌ন ইমরান জীবিত থাকত, যার উপর তাওরাত নাযিল হয়েছে; কিংবা ঈসা ইব্‌ন মারইয়াম জীবিত থাকত, যার উপর ইঞ্জিল নাযিল হয়েছে; তারাও ইসলামের অনুসারী হত। তারাসহ সকল নবী থাকলেও কারো পক্ষে পরিপূর্ণ ও সম্মানিত শরিয়তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকত না। অতএব মহান নবীর আদর্শ ত্যাগ করে আমাদের পক্ষে কীভাবে সম্ভব এমন জাতির অনুসরণ করা, যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট, মানুষকে পথ ভ্রষ্টকারী ও সঠিক দীন থেকে বিচ্যুত। তারা বিকৃতি, পরিবর্তন ও অপব্যাখ্যা করে আসমানি ওহির কোন বৈশিষ্ট্য তাদের দীনে অবশিষ্ট রাখেনি। দ্বিতীয়ত তাদের ধর্ম রহিত, রহিত ধর্মের অনুসরণ করা হারাম, তার উপর যত আমল করা হোক আল্লাহ গ্রহণ করবেন না। তাদের ধর্ম ও মানব রচিত ধর্মের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আল্লাহ যাকে চান সঠিক পথের সন্ধান দান করেন”।[15]

প্রিয় পাঠক, নববর্ষ উদযাপন করে আমরা তাদের অনুসরণ করতে পারি না। তারা অভিশপ্ত ও গোমরাহ। এসব তাদের বানানো উৎসব, কুসংস্কার ও পাপ কম। ইহুদিদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:

﴿مِّنَ ٱلَّذِينَ هَادُواْ يُحَرِّفُونَ ٱلۡكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِۦ وَيَقُولُونَ سَمِعۡنَا وَعَصَيۡنَا وَٱسۡمَعۡ غَيۡرَ مُسۡمَعٖ وَرَٰعِنَا لَيَّۢا بِأَلۡسِنَتِهِمۡ وَطَعۡنٗا فِي ٱلدِّينِۚ وَلَوۡ أَنَّهُمۡ قَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَا وَٱسۡمَعۡ وَٱنظُرۡنَا لَكَانَ خَيۡرٗا لَّهُمۡ وَأَقۡوَمَ وَلَٰكِن لَّعَنَهُمُ ٱللَّهُ بِكُفۡرِهِمۡ فَلَا يُؤۡمِنُونَ إِلَّا قَلِيلٗا ٤٦﴾ [النساء : ٤٦] 

“ইহুদিদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা কালামসমূহকে তার স্থান থেকে পরিবর্তন করে ফেলে এবং বলে, ‘আমরা শুনলাম ও অমান্য করলাম’। আর তুমি শোন না শোনার মত, তারা নিজেদের জিহ্বা বাঁকা করে এবং দীনের প্রতি খোঁচা মেরে বলে, ‘রাইনা’।[16] আর তারা যদি বলত, ‘আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম এবং তুমি শোন ও আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখ’ তাহলে এটি হত তাদের জন্য কল্যাণকর ও যথার্থ। কিন্তু তাদের কুফরির কারণে আল্লাহ তাদেরকে লানত করেছেন। তাই তাদের কম সংখ্যক লোকই ঈমান আনে”।[17]

খৃস্টানদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলে:

﴿وَمِنَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّا نَصَٰرَىٰٓ أَخَذۡنَا مِيثَٰقَهُمۡ فَنَسُواْ حَظّٗا مِّمَّا ذُكِّرُواْ بِهِۦ فَأَغۡرَيۡنَا بَيۡنَهُمُ ٱلۡعَدَاوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِۚ وَسَوۡفَ يُنَبِّئُهُمُ ٱللَّهُ بِمَا كَانُواْ يَصۡنَعُونَ ١٤﴾ [المائ‍دة: ١٤] 

“আর যারা বলে, ‘আমরা নাসারা’, আমি তাদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তার একটি অংশ ভুলে গেছে। ফলে আমি তাদের মধ্যে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত শত্রুতা ও ঘৃণা উস্‌কে দিয়েছি এবং তারা যা করত সে সম্পর্কে অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে অবহিত করবেন”।[18]

মুসলিম ভাই, আমরা বিভিন্ন উপলক্ষে যেসব অনুষ্ঠান পালন করি তার অধিকাংশ ইহুদি, খৃস্টান ও মুশরিকদের তৈরি। সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আমরা আকিকা ত্যাগ করে খাতনার সময় ঘটা করে অনুষ্ঠান করি। খাতনা করা সুন্নত, এতে কোন অনুষ্ঠান নেই, তাতে আমরা অনুষ্ঠান করি, এদিকে আকিকা দেয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ, অথচ আমরা তাই ত্যাগ করছি। আমরা কি এতটাই নির্বোধ বনে গেলাম! আমরা প্রতিদিন কমপক্ষে সতেরো বার সূরা ফাতেহা পাঠ করে সিরাতে মুস্তাকিমের প্রার্থনা করি, বাস্তবে আমরা যা ত্যাগ করছি, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ ও সুন্নত।কমপক্ষে সতেরো বার অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টদের রাস্তা থেকে পানাহ চাই, অথচ বাস্তবে আমরা তাদের অনুসরণ করছি, অর্থাৎ ইহুদি ও খৃস্টানদের পথ। এ কেমন বৈপরীত্য! আমাদের অবচেতনতা যেন পাগলামিকেও হারমানায়।

ইহুদি, খৃস্টান ও মুশরিকরা মুসলিমের শত্রু

নববর্ষ উদযাপন করে আমরা যাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছি, তারা প্রকৃতপক্ষে আমাদের শত্রু। তারা কখনো আমাদের বন্ধু হবে না, যাবত আমরা আমাদের দীন ত্যাগ করে তাদের ধর্মের অনুসরণ না করি। তারা আমাদের দীন ও নবীকে নিয়ে উপহাস করে। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ دِينَكُمۡ هُزُوٗا وَلَعِبٗا مِّنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلِكُمۡ وَٱلۡكُفَّارَ أَوۡلِيَآءَۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٥٧﴾ [المائ‍دة: ٥٧]

“হে মুমিনগণ, তোমরা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যারা তোমাদের দীনকে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করেছে, তাদের মধ্য থেকে তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও কাফিরদেরকে। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক”।[19] 
অন্যত্র ঘোষণা দিচ্ছেন, যে তাদের দিকে ধাবিত হবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ ٱلۡيَهُودَ وَٱلنَّصَٰرَىٰٓ أَوۡلِيَآءَۘ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمۡ فَإِنَّهُۥ مِنۡهُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥١﴾ [المائ‍دة: ٥١]   

“হে মুমিনগণ, ইহুদি ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ জালিম কওমকে হিদায়াত দেন না”।[20] 
অতএব তাদের ঈদ ও উৎসবে যোগ দেয়া, তাদের সমর্থন জানানো কিংবা কোন ধরণের সহায়তা করা নিজের দীনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। 

মুসলিমের ঈদ

প্রিয় পাঠক, আমাদেরকে ইসলামে স্বীকৃত উৎসব তথা ঈদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের ঈদ একটি ইবাদত, যার দ্বারা আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করি। এ ঈদের সংখ্যা তিনটি, চতুর্থ কোন ঈদ নেই। জুমা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদহা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«إِنَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ يَوْمُ عِيدٍ، فَلَا تَجْعَلُوا يَوْمَ عِيدِكُمْ يَوْمَ صِيَامِكُمْ، إِلَّا أَنْ تَصُومُوا قَبْلَهُ أَوْ بَعْدَهُ»

“নিশ্চয় জুমার দিন ঈদের দিন, অতএব তোমাদের ঈদের দিনকে তোমরা সিয়ামের দিন বানিয়ো না, তবে তার পূর্বে কিংবা পরে যদি সিয়াম রাখ, তাহলে পার”।[21] 
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا، فَقَالَ: " مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ؟ " قَالُوا: كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى، وَيَوْمَ الْفِطْرِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করলেন, তখন তাদের দু’টি দিন ছিল, যেখানে তারা খেলা-ধুলা করত। তিনি বললেন: এ দু’টি দিন কি? তারা বলল: আমরা এতে জাহিলি যুগে খেলা-ধুলা করতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তার পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম দু’টি দিন দিয়েছেন: ঈদুল আদহা ও ঈদুল ফিতর”।[22] 
ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এ হাদিস প্রমাণ করে কাফেরদের উৎসব পালন করা হারাম। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের জাহিলি দুই ঈদের উপর বহাল রাখেননি। রীতি মোতাবেক তাতে খেলা-ধুলার অনুমতি দেননি। তিনি বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। এর দাবি পূর্বের আমল ত্যাগ করা। কারণ বদল করার পর উভয় বস্তুকে জমা করা যায় না। বদল শব্দের অর্থ একটি ত্যাগ করে অপরটি গ্রহণ করা”।[23] 
অতএব কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় ইহুদি, খৃস্টান ও মুশরিকদের উৎসব পালন করা, যেমন নববর্ষ ও অন্যান্য উৎসবসমূহ।

রাহমানের বান্দারা মুশরিকদের উৎসবে যোগ দেয় না

সূরা ফুরকানে আল্লাহ তাআলা বিশেষ বান্দাদের গুণাবলী উল্লেখ করেছেন, যাদেরকে তিনি রহমানের বান্দা বলে সম্বোধন করেছেন। তাদের একটি বিশেষ গুণ, তারা কখনো কাফেরদের উৎসবে যোগ দেয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন:

﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ وَإِذَا مَرُّواْ بِٱللَّغۡوِ مَرُّواْ كِرَامٗا ٧٢﴾ [الفرقان: ٧٢] 

“আর যারা উৎসবে উপস্থিত হয় না এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায়”।[24]

তাবেয়ি মুহাম্মদ ইব্‌ন সিরিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ﴿ٱلزُّورَ ﴾ অর্থ খৃস্টানদের ঈদ[25], মুজাহিদ, রাবি ইব্‌ন আনাস ও দাহহাক রাহিমাহুমুল্লাহ প্রমুখ বলেন:﴿ٱلزُّورَ ﴾ অর্থ মুশরিকদের ঈদ। ইকরিমা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ﴿ٱلزُّورَ ﴾ অর্থ “জাহেলি যুগে প্রচলিত তাদের একটি খেলনা”। আমর ইব্‌ন মুররাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ﴿ٱلزُّورَ ﴾ অর্থ “রহমানের বান্দারা মুশরিকদের শিরকি কাজের দিকে ধাবিত হয় না এবং তাদের সাথে মিশে না”। 
শায়খুল ইসলাম ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ এসব বাণী নকল করে বলেন:তাবেয়িদের এ অর্থ এবং যারা বলেন: ﴿ٱلزُّورَ ﴾ অর্থ শিরক বা জাহেলি যুগের মূর্তি, বা অশ্লীল মেলা ও যাত্রা, বা গানবাদ্য ইত্যাদি অর্থে কোন বৈপরীত্য নেই, কারণ পূর্বসূরিরা এভাবে তাফসির করতেন। তারা শ্রোতার অবস্থা ও প্রয়োজনের খাতিরে এক বস্তুকে বিভিন্নভাবে প্রকাশ করতেন। আর যারা বলেন: لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ অর্থ “তারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না”, তাদের ব্যাখ্যা সঠিক নয়, কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন: لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ তিনি لَا يَشۡهَدُونَبـِٱلزُّورَ বলেননি। অর্থাৎ ب উপসর্গ যোগে বলেননি। আরবরা কোথাও উপস্থিত হলে বলে: شهدت كذا  আমি সেখানে উপস্থিত হয়েছি, অর্থাৎ شهدক্রিয়ার সাথে ب উপসর্গ যোগ করেন না। ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

«أَنَّ الْغَنِيمَةَ لِمَنْ شَهِدَ الْوَقْعَةَ»

“যুদ্ধে যে উপস্থিত হবে তার জন্যই গণিমত”।[26] 
এভাবে তারা উপস্থিতির জন্য شهد ক্রিয়া ব্যবহার করেন ب উপসর্গ ব্যতীত। আর যখন কেউ বলে: شهدت بكذا  তার অর্থ আমি তার সংবাদ দিয়েছি। অতএব আরবদের ব্যবহার থেকেও প্রমাণ হয় ﴿لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ﴾ অর্থ “তারা কাফেরদের উৎসবে উপস্থিত হয় না, যদি ﴿ٱلزُّورَ ﴾ অর্থ “তারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না” হত, তাহলে شهد ক্রিয়ার পর ب উপসর্গ যোগ হত, যেমন আরবদের রীতি। অতএব এখানে আল্লাহ কাফেরদের ঈদ সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন এবং বলেছেন রহমানের বান্দারা সেখানে হাজির হয় না। যখন তাদের ঈদ ও উৎসবসমূহ দেখা ও সেখানে উপস্থিত হওয়া সমীচীন নয়, তখন তাদের সাথে অংশ গ্রহণ করা ও একাত্মতা পোষণ করা কত বড় জঘন্য অপরাধ সহজে অনুমেয়”।[27]

ইব্‌ন কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেন: لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ অর্থ “তারা কাফেরদের উৎসবে উপস্থিত হয় না” স্পষ্টভাবে বুঝে আসে। এ জন্য হয়তো আল্লাহ পরবর্তীতে বলেছেন: وَإِذَا مَرُّواْ بِٱللَّغۡوِ مَرُّواْ كِرَامٗا “এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায়”।[28] অর্থাৎ তারা সেখানে উপস্থিত হয় না, যদি কখনো ঘটনাক্রমে তার পাশ দিয়ে যেতে হয়, তারা চলে যায়, কিন্তু তার কোন বিষয় দ্বারা নিজেদেরকে কলুষিত করে না। এ জন্য আল্লাহ বলেছেন: مَرُّواْ كِرَامٗا সম্মানের সাথে চলে যায়। একদা ইব্‌ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু গানবাদ্যের পাশ দিয়ে সেগুলোকে উপেক্ষা করে অতিক্রম করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

 «لقد أصبح ابن مسعود، وأمسى كريمًا».

“ইব্‌ন মাসউদ সকাল ও সন্ধ্যা করেছে সম্মানের সাথে”। অতঃপর তাবেয়ি ইবরাহিম ইব্‌ন মায়সারাহ রাহিমাহুল্লাহ তিলাওয়াত করেন: وَإِذَا مَرُّواْ بِٱللَّغۡوِ مَرُّواْ كِرَامٗا [এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায়]”।[29]

কাফেরদের সাথে ঘনিষ্ঠতা নিফাকি

কাফেরদের সাথে সম্পর্ক রাখা, তাদের কাজ ও কর্মে সমর্থন বা সহায়তা দেয়া, সেখানে উপস্থিত হওয়া, তাদের থেকে লাভের আশায় হোক কিংবা ভয়ে হোক নেফাকের আলামত। মদিনার যেসব মুনাফিকরা মুসলিমদের বিপর্যয় আশঙ্কা করে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ বন্ধুত্ব নিয়ে ইহুদি ও মক্কার কাফেরদের সাথে সম্পর্ক কায়েম করেছিল, আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন:     

﴿فَتَرَى ٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٞ يُسَٰرِعُونَ فِيهِمۡ يَقُولُونَ نَخۡشَىٰٓ أَن تُصِيبَنَا دَآئِرَةٞۚ فَعَسَى ٱللَّهُ أَن يَأۡتِيَ بِٱلۡفَتۡحِ أَوۡ أَمۡرٖ مِّنۡ عِندِهِۦ فَيُصۡبِحُواْ عَلَىٰ مَآ أَسَرُّواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ نَٰدِمِينَ ٥٢﴾ [المائدة: ٥٢] 

“সুতরাং তুমি দেখতে পাবে, যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা কাফিরদের মধ্যে (বন্ধুত্বের জন্য) ছুটছে। তারা বলে: ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে, কোন বিপদ আমাদেরকে আক্রান্ত করবে’। অতঃপর হতে পারে আল্লাহ দান করবেন বিজয় কিংবা তার পক্ষ থেকে এমন কিছু, যার ফলে তারা তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তাতে লজ্জিত হবে”।[30] 
ইব্‌ন কাসির রহ. বলেন: مَّرَضٞ  অর্থ সন্দেহ, দ্বিধা ও নিফাক। يُسَٰرِعُونَ فِيهِمۡঅর্থ বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ মহব্বত ও বন্ধুত্বের প্রস্তাব নিয়ে দ্রুত ছুটে যায়।[31] 
সন্দেহ নেই তাদের উৎসব পালন করা মানে তাদের সাথে বন্ধুত্বের বিনিময় করা, যা নেফাকের নিদর্শন, কোন মুসলিমের পক্ষে তা কখনো সম্ভব নয়।

শুভ নববর্ষ বলা

আমরা চিন্তা করেছি কিংবা ভেবে দেখেছি যে, নববর্ষের শুরুতে যখন বলি, যাকেই বলি: “শুভ নববর্ষ”, কিংবা “হ্যাপি নিউ ইয়ার”? কার অনুসরণ করছি, কাকে বলছি ও কি বলছি? নিশ্চয় আমরা চিন্তা করিনি, চিন্তা করলে কখনো আমাদের বিবেক সায় দিত না কুফরি কথার পক্ষে, কিংবা তাদের শুভেচ্ছা জানানোর প্রতি, যারা ঈসা আলাইহিস সালামকে বলেছে স্বয়ং আল্লাহ, কখনো বলেছে আল্লাহর পুত্র, কখনো বলেছে তিনজনের তৃতীয় সত্বা। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿وَقَالَتِ ٱلۡيَهُودُ عُزَيۡرٌ ٱبۡنُ ٱللَّهِ وَقَالَتِ ٱلنَّصَٰرَى ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ ٱللَّهِۖ ذَٰلِكَ قَوۡلُهُم بِأَفۡوَٰهِهِمۡۖ يُضَٰهِ‍ُٔونَ قَوۡلَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَبۡلُۚ قَٰتَلَهُمُ ٱللَّهُۖ أَنَّىٰ يُؤۡفَكُونَ ٣٠﴾ [التوبة: ٣٠] 

“আর ইহুদিরা বলে, ‘উজাইর আল্লাহর পুত্র এবং নাসারারা বলে, ‘মাসীহ আল্লাহর পুত্র। এটা তাদের মুখের কথা, তারা সেসব লোকের কথার অনুরূপ বলছে যারা ইতঃপূর্বে কুফরি করেছে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন, কোথায় ফেরানো হচ্ছে এদেরকে”?[32] 
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:

﴿لَّقَدۡ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ ثَالِثُ ثَلَٰثَةٖۘ وَمَا مِنۡ إِلَٰهٍ إِلَّآ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۚ وَإِن لَّمۡ يَنتَهُواْ عَمَّا يَقُولُونَ لَيَمَسَّنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٧٣﴾ [المائ‍دة: ٧٣] 

“অবশ্যই তারা কুফরী করেছে, যারা বলে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তিন জনের তৃতীয়জন’। যদিও এক ইলাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। আর যদি তারা যা বলছে, তা থেকে বিরত না হয়, তবে অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব স্পর্শ করবে”।[33] 
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:

﴿لَقَدۡ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ مَرۡيَمَۖ ٧٢﴾ [المائ‍دة: ٧٢]   

“অবশ্যই তারা কুফরি করেছে, যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ হলেন মারইয়াম পুত্র মাসীহ’।[34] 
অথচ ঈসা আলাইহিস সালাম কখনো এ কথা বলেননি। তার কথা আল্লাহ নকল করেছেন এভাবে:

﴿وَقَالَ ٱلۡمَسِيحُ يَٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمۡۖ إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [المائ‍دة: ٧٢]  

“আর মাসীহ বলেছে, ‘হে বনি ইসারাঈল, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদত কর’। নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর জালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই”।[35]

তাদের কুফরি কথার কারণে আসামন, যমীন ও পাহাড়সমূহে কম্পন সৃষ্টি হয়, তারা ভীত হয়। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿تَكَادُ ٱلسَّمَٰوَٰتُ يَتَفَطَّرۡنَ مِنۡهُ وَتَنشَقُّ ٱلۡأَرۡضُ وَتَخِرُّ ٱلۡجِبَالُ هَدًّا ٩٠ أَن دَعَوۡاْ لِلرَّحۡمَٰنِ وَلَدٗا ٩١ وَمَا يَنۢبَغِي لِلرَّحۡمَٰنِ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا ٩٢﴾ [مريم: ٩٠،  ٩٢] 

“এতে আসমানসমূহ ফেটে পড়ার, যমীন বিদীর্ণ হওয়ার এবং পাহাড়সমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। কারণ তারা পরম করুণাময়ের সন্তান আছে বলে দাবি করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা পরম করুণাময়ের জন্য শোভনীয় নয়”।[36]

যারা আল্লাহর সাথে শরীক করেছে ও তার গোস্বার পাত্রে পরিণত হয়েছে, তাদের জন্য আল্লাহ জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন, আমরা কিভাবে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানাই, কিভাবে তাদের অনুসরণ করি এবং বলি নববর্ষের শুভেচ্ছা! 
ইব্‌নুল কায়্যিম জাওযি রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “তাদেরকে তাদের কুফরি উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো সবার নিকট হারাম, যেমন বলা: “তোমার উৎসব সফল হোক”, “শুভ বড় দিন” অথবা এ জাতীয় অন্যান্য শব্দ, যা বর্তমান আমরা শুনতে পাই। এভাবে শুভেচ্ছা জানানোর ফলে যদিও সে কাফের হয় না, কিন্তু তার এ কর্ম হারাম কোন সন্দেহ নেই। কারণ প্রকারান্তরে এভাবে সে ক্রুশকে সেজদার প্রতি উদ্বুদ্ধ করছে! এ জাতীয় শুভেচ্ছা মদ্যপ, হত্যাকারী ও ব্যভিচারীকে শুভেচ্ছার জানানোর চেয়ে মারাত্মক। অথচ যে কবিরা গুনাহের জন্য শুভেচ্ছা জানাল, সে নিজেকে আল্লাহর শাস্তি ও গোস্বার জন্য প্রস্তুত করল”।[37]

প্রিয় পাঠক, আপনার জন্য বৈধ নয় ইহুদি, খৃস্টান ও মুশরিকদের শুভেচ্ছা জানানো, তাদেরকে কার্ড উপহার দেয়া, বা তাদের উৎসবে কল্যাণ কামনা করা।

তারা ফিলিস্তিনের বুকে আপনার ভাইকে হত্যা করছে, ইহুদিদের মদদ দিচ্ছে এবং দেশে দেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আফসোস, ধোঁকায় লিপ্ত কতক মুসলিম তবুও তাদের শুভেচ্ছা জানায়! এরূপ কখনো ঠিক নয়, যেমন ঠিক নয় তাদের উপহার গ্রহণ করা, বরং তাদের মুখের উপর তা ফেরত দেয়াই শ্রেয়।

তাদের উৎসব ও কুফরিতে ব্যবহৃত বস্তুসমূহ বিক্রি করা, তৈরি করা ও বাজারজাত করা নিষেধ। তাদের ইবাদত ও ধর্মীয় উৎসব পালনের জন্য কমিউনিটি সেন্টার, হল রোম, হোটেল ও মাঠ ভাড়া দেয়া বৈধ নয়। 
শায়খুল ইসলাম ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এমন কোন বস্তু বিক্রি করা বৈধ নয়, যার দ্বারা তারা ধর্মীয় উৎসব পালনে উপকৃত হয়”। অর্থাৎ তাদের নিকট এমন বস্তু বিক্রি করা যাবে না, যার দ্বারা কুফরি, গোমরাহি ও বাতিল ধর্মের উৎসব পালনে সক্ষম হয়। এসব পণ্য থেকে উপার্জিত মুনাফা হারাম। আর যে শরীর হারাম বস্তু দ্বারা সৃষ্ট তার জন্য জাহান্নাম শ্রেয়।

নববর্ষ ও আমাদের সতর্কতা

আমরা বছরের অন্যান্য দিনের ন্যায় নববর্ষের দিনকে গণ্য করব। এতে কোন ধরণের অনুষ্ঠান করব না ও তাতে অংশ নেব না। আমাদের সন্তানদের প্রতি গভীর দৃষ্টি রাখব, যেন তারা বিজাতীয় উৎসবে অংশ গ্রহণ না করে। ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالْأَمِيرُ رَاعٍ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ، فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ».

“তোমরা সবাই জিম্মাদার এবং তোমাদের সবাইকে তার জিম্মাদারি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আমির জিম্মাদার, অনুরূপ ব্যক্তি তার পরিবারে জিম্মাদার। নারী তার স্বামীর ঘর ও সন্তানের জিম্মাদার। অতএব তোমরা সবাই জিম্মাদার এবং সবাইকে তার জিম্মাদারি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে”।[38] 
অতএব যার অধীনে যারা রয়েছে তাদের দেখা-শুনা করা, দীন ও দুনিয়ার কল্যাণের পথ বাতলানো এবং তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করা তার দায়িত্ব। যে নিজ দায়িত্ব আঞ্জাম দিবে, তার জন্য রয়েছে বড় প্রতিদান, আর যে নিজ দায়িত্বে অবহেলা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।

নববর্ষ কিংবা এ জাতীয় উৎসবে আমরা মুসলিম অমুসলিম কারো সাথে উপহার আদান-প্রদান করব না, বিশেষ করে ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মদিন ও ইংরেজি নববর্ষে। আমরা এতে ছুটি কাটাব না, না স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করব। এ দিনের সংস্কৃতি হিসেবে কারো যোগাযোগ করব না।

প্রিয় পাঠক, সন্তান কিংবা পরিবারের কোন সদস্যের আবদার রক্ষার্থে আল্লাহর নির্দেশ উপেক্ষা করে তাদের উৎসব উদযাপন করা যাবে না। 
ইমাম যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “যদি কেউ বলে: আমরা এগুলো ছোট বাচ্চা ও নারীদের জন্য করি, তাকে বলা হবে: সবচেয়ে হতভাগা সে ব্যক্তি যে আল্লাহর গোস্বার বস্তু দ্বারা পরিবার ও সন্তানকে সন্তুষ্ট করে। অতঃপর তিনি বলেন: আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«مَنْ تَنَافَى أَرْضَ الأَعَاجِمِ فَصَنَعَ نَيْرُوزَهُمْ وَمَهْرِجَانِهِمْ حُشِرَ مَعَهُمْ»

“যে অনারব দেশ বিচরণ করে, অতঃপর তাদের নওরোজ ও মেহেরজান উৎযান করে, তাদের সাথে তাকে উঠানো হবে”।[39] 
তার এ কথার দাবি এসব কর্ম কবিরা গুনা এবং এ জাতীয় অল্প অপরাধ অধিক অপরাধের দিকে ধাবিত করে। তাই মুসলিমের কর্তব্য এ জাতীয় কর্মের পথ একেবারে বন্ধ করা এবং পরিবার ও সন্তানের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি করা। বিদআত থেকে বিরত থাকা ইবাদত। কেউ বলবেন না: এর দ্বারা বাচ্চাদের আনন্দ দেই! আপনি কি বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য আল্লাহর গোস্বা ও শয়তানের সন্তুষ্টির বস্তু ব্যতীত কিছু পেলেন না! এগুলো কুফরির আলামত ও সীমালঙ্ঘন বৈ কিছু নয়?! আপনি খারাপ অভিভাবক, বস্তুত আপনি গড়ে উঠেছেন এভাবে”।[40] 

        

মুসলিম ভাই, আসুন কাফেরদের অনুসরণ ত্যাগ করে আমরা পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করি। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিচ্ছেন:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱدۡخُلُواْ فِي ٱلسِّلۡمِ كَآفَّةٗ وَلَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِۚ إِنَّهُۥ لَكُمۡ عَدُوّٞ مُّبِينٞ ٢٠٨﴾ [البقرة: ٢٠٨] 

“হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু”।[41]

অভিধানে ইসলাম শব্দের অর্থ দু’টি: (ক). আত্মসমর্পণ করা ও আনুগত্য স্বীকার করা। (খ). আল্লাহর জন্য ইবাদত একনিষ্ঠ করা। প্রথম অর্থের সমর্থনে আল্লাহ তাআলার বাণী:

﴿أَفَغَيۡرَ دِينِ ٱللَّهِ يَبۡغُونَ وَلَهُۥٓ أَسۡلَمَ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ طَوۡعٗا وَكَرۡهٗا وَإِلَيۡهِ يُرۡجَعُونَ ٨٣﴾ [ال عمران: ٨٣] 

“তারা কি আল্লাহর দীনের পরিবর্তে অন্য কিছু তালাশ করছে? অথচ আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা তারই আনুগত্য করে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় এবং তাদেরকে তারই নিকট প্রত্যাবর্তন করা হবে”।[42] 
আরো ইরশাদ হচ্ছে:

﴿فَلَمَّآ أَسۡلَمَا وَتَلَّهُۥ لِلۡجَبِينِ ١٠٣﴾ [الصافات : ١٠٣] 

“অতঃপর তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং সে তাকে কাত করে শুইয়ে দিল”।[43] 
এ দুই আয়াতে ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ ও আনুগত্য করা।

দ্বিতীয় অর্থ সমর্থনে আল্লাহ তাআলার বাণী:

﴿وَمَن يُسۡلِمۡ وَجۡهَهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰۗ وَإِلَى ٱللَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ ٢٢﴾ [لقمان: ٢٢] 

“আর যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ ও বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে, সে তো শক্ত রশি আঁকড়ে ধরে। আর সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহরই কাছে”।[44] 
আরো ইরশাদ হচ্ছে:

﴿وَمَن يَرۡغَبُ عَن مِّلَّةِ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ إِلَّا مَن سَفِهَ نَفۡسَهُۥۚ وَلَقَدِ ٱصۡطَفَيۡنَٰهُ فِي ٱلدُّنۡيَاۖ وَإِنَّهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ لَمِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٣٠ إِذۡ قَالَ لَهُۥ رَبُّهُۥٓ أَسۡلِمۡۖ قَالَ أَسۡلَمۡتُ لِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٣١﴾ [البقرة: ١٣٠،  ١٣١] 

“আর যে নিজেকে নির্বোধ বানিয়েছে, সে ছাড়া কে ইবরাহিমের আদর্শ থেকে বিমুখ হতে পারে? আর অবশ্যই আমি তাকে দুনিয়াতে বেছে নিয়েছি এবং নিশ্চয় সে আখিরাতে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যখন তার রব তাকে বললেন: ‘তুমি আত্মসমর্পণ কর’। সে বলল, ‘আমি সকল সৃষ্টির রবের কাছে নিজেকে সমর্পণ করলাম’।[45] 
এ দুই আয়াতে ইসলামের অর্থ শিরক মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য সকল প্রকার ইবাদত উৎসর্গ করা। তাই মুসলিম হতে হলে আমাদের দু’টি কাজ করতে হবে: এক. আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা। দুই. সকল প্রকার ইবাদত একনিষ্ঠভাবে তাকে উৎসর্গ করা। মাখলুকের নিকট প্রেরিত আল্লাহর সকল রেসালাতের শিক্ষা এটাই ছিল। এ ইসলাম আল্লাহর একমাত্র দীন। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ ١٩﴾ [ال عمران: ١٩] 

“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট দীন হচ্ছে ইসলাম”।[46] 
নুহ আলাইহিস সালাম তার কওমকে বলছেন:

﴿فَإِن تَوَلَّيۡتُمۡ فَمَا سَأَلۡتُكُم مِّنۡ أَجۡرٍۖ إِنۡ أَجۡرِيَ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِۖ وَأُمِرۡتُ أَنۡ أَكُونَ مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ٧٢﴾ [يونس : ٧٢] 

“অতঃপর তোমরা যদি বিমুখ হও, তবে আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর দায়িত্বে। আর আমি আদিষ্ট হয়েছি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার”।[47] 
ইবরাহিম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে:

﴿مَا كَانَ إِبۡرَٰهِيمُ يَهُودِيّٗا وَلَا نَصۡرَانِيّٗا وَلَٰكِن كَانَ حَنِيفٗا مُّسۡلِمٗا وَمَا كَانَ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٦٧﴾ [ال عمران: ٦٧] 

“ইবরাহিম ইহুদি ছিল না, নাসারাও ছিল না, বরং সে ছিল একনিষ্ঠ মুসলিম। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না”।[48] 
কাবা নির্মাণের সময় ইবরাহিম ও ইসমাঈল নিজেদের ও সন্তানের জন্য মুসলিম হওয়ার দোয়া করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿رَبَّنَا وَٱجۡعَلۡنَا مُسۡلِمَيۡنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَآ أُمَّةٗ مُّسۡلِمَةٗ لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبۡ عَلَيۡنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١٢٨﴾ [البقرة: ١٢٨] 

“হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”।[49] 
ইয়াকুব আলাইহিস সালামের মৃত্যুর সময় তার সন্তানেরা তাকে মুসলিম হিসেবে বেচে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿أَمۡ كُنتُمۡ شُهَدَآءَ إِذۡ حَضَرَ يَعۡقُوبَ ٱلۡمَوۡتُ إِذۡ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعۡبُدُونَ مِنۢ بَعۡدِيۖ قَالُواْ نَعۡبُدُ إِلَٰهَكَ وَإِلَٰهَ ءَابَآئِكَ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗا وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ ١٣٣﴾ [البقرة: ١٣٣] 

“নাকি তোমরা সাক্ষী ছিলে, যখন ইয়াকূবের নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়েছিল? যখন সে তার সন্তানদেরকে বলল, ‘আমার পর তোমরা কার ইবাদত করবে? তারা বলল, ‘আমরা ইবাদত করব আপনার ইলাহের, আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহিম, ইসমাঈল ও ইসহাকের ইলাহের, যিনি এক ইলাহ। আর আমরা তারই অনুগত”।[50] 
মুসা আলাইহিস সালাম মুসলিম হওয়ার শর্তে তার কওমকে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে বলেছেন। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿وَقَالَ مُوسَىٰ يَٰقَوۡمِ إِن كُنتُمۡ ءَامَنتُم بِٱللَّهِ فَعَلَيۡهِ تَوَكَّلُوٓاْ إِن كُنتُم مُّسۡلِمِينَ ٨٤﴾ [يونس : ٨٤] 

“আর মুসা বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক, তবে তারই উপর তাওয়াক্কুল কর, যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাক”।[51] 
ইউসুফ আলাইহিস সালাম মুসলিম হিসেবে মৃত্যু বরণের জন্য আল্লাহ নিকট দোয়া করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿رَبِّ قَدۡ ءَاتَيۡتَنِي مِنَ ٱلۡمُلۡكِ وَعَلَّمۡتَنِي مِن تَأۡوِيلِ ٱلۡأَحَادِيثِۚ فَاطِرَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ أَنتَ وَلِيِّۦ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ تَوَفَّنِي مُسۡلِمٗا وَأَلۡحِقۡنِي بِٱلصَّٰلِحِينَ ١٠١﴾ [يوسف: ١٠٠] 

“হে আমার রব, আপনি আমাকে রাজত্ব দান করেছেন এবং স্বপ্নের কিছু ব্যাখ্যা শিখিয়েছেন। হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, দুনিয়া ও আখিরাতে আপনিই আমার অভিভাবক, আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং নেককারদের সাথে আমাকে যুক্ত করুন”।[52] 
ঈসা আলাইহিস সালামের সাথীগণ নিজেদের ইসলামের উপর ঈসা আলাইহিস সালামকে সাক্ষী বানিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿فَلَمَّآ أَحَسَّ عِيسَىٰ مِنۡهُمُ ٱلۡكُفۡرَ قَالَ مَنۡ أَنصَارِيٓ إِلَى ٱللَّهِۖ قَالَ ٱلۡحَوَارِيُّونَ نَحۡنُ أَنصَارُ ٱللَّهِ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَٱشۡهَدۡ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ ٥٢﴾ [ال عمران: ٥٢] 

“অতঃপর যখন ঈসা তাদের পক্ষ হতে কুফরি উপলব্ধি করল, তখন বলল: ‘কে আল্লাহর জন্য আমার সাহায্যকারী হবে’? হাওয়ারীগণ বলল, ‘আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম”।[53]

আমরা দেখছি সকল নবী ও রাসূলগণ ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছিলেন এবং তারা স্বীয় কওমকে তার দিকে আহ্বান করতেন, যার অর্থ আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ কর এবং সকল ইবাদত একনিষ্ঠভাবে তাকে উৎসর্গ কর। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিলকৃত দীনের নাম হয় ইসলাম এবং তার অনুসারীদের নাম হয় মুসলিম। তাদের এ নামকরণ করেছেন ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। আল্লাহ তাআলা বলেন:

﴿وَجَٰهِدُواْ فِي ٱللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِۦۚ هُوَ ٱجۡتَبَىٰكُمۡ وَمَا جَعَلَ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلدِّينِ مِنۡ حَرَجٖۚ مِّلَّةَ أَبِيكُمۡ إِبۡرَٰهِيمَۚ هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ مِن قَبۡلُ ٧٨﴾ [الحج : ٧٨] 

“আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিৎ। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। দীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিমের দীন। তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিম’ পূর্বে”।[54] 
আল্লাহ তাআলা এ দীন ব্যতীত কোন দীন গ্রহণ করবেন না। ইরশাদ হচ্ছে:    

﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ال عمران: ٨٥] 

“আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন চায়, তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”।[55] 
আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য ইসলামকে পছন্দ করেছেন এবং আমাদের জন্য আমাদের দীনকে পূর্ণ করে দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ٣﴾ [المائ‍دة: ٣] 

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে”।[56] 
আল্লাহ যাকে হিদায়েত দেয়ার ইচ্ছা করেন ইসলামের জন্য তার অন্তর খুলে দেন। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿فَمَن يُرِدِ ٱللَّهُ أَن يَهۡدِيَهُۥ يَشۡرَحۡ صَدۡرَهُۥ لِلۡإِسۡلَٰمِۖ ١٢٥﴾ [الانعام: ١٢٥] 

“সুতরাং যাকে আল্লাহ হিদায়াত করতে চান, ইসলামের জন্য তার বুক উন্মুক্ত করে দেন”।[57] 
আল্লাহ তাআলা মুসলিম না হয়ে মৃত্যু বরণ করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢﴾ [ال عمران: ١٠٢] 

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলিম হওয়া ছাড়া মারা যেও না”।[58]  
আমি মুসলিম, আমার আত্মসমর্পণ আল্লাহর সমীপে, তার সকল বিধান মেনে নিলাম, এ ছাড়া বিধর্মী সকল বিধান, উৎসব ও ইবাদত প্রত্যাখ্যান করলাম। আমার সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য উৎসর্গ। ইরশাদ হচ্ছে:

﴿قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣﴾ [الانعام: ١٦٢،  ١٦٣] 

“বল, ‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব। তার কোন শরীক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর আমি মুসলিমদের মধ্যে প্রথম”।[59]

মুসলিম ভাই, পৃথিবীতে দু’প্রকার দীন রয়েছে: (ক). মানব রচিত দীন (খ). আসমানী বা ওহী নির্ভর দীন। (ক). মানব রচিত দীন যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ ও অগ্নিপূজক ইত্যাদি। (খ). আসমানী দীন যেমন ইহুদি, খৃস্টান ও ইসলাম। মানব জাতির হিদায়েত ও কল্যাণের জন্য আল্লাহ তাআলা সকল নবী ও রাসূলকে এ দীনসহ প্রেরণ করেছেন। ইহুদি-খৃস্টানদের দীন আজ বিকৃত, রহিত ও মানব রচিত দীনের ন্যায় প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহর নিকট তার কোন মূল্য নেই। আল্লাহ আমাদেরকে সর্বোত্তম দীন, সর্বোত্তম কুরআন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল দান করেছেন। আসুন আমরা দীন ইসলাম ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শকে আঁকড়ে ধরি, পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করি এবং কাফের মুশরিকদের সঙ্গ ত্যাগ করি, তাদের কৃষ্টি-কালচার পরিহার করি। আল্লাহ আমাদেরকে তার নিকট আত্মসমর্পণকারী ও একনিষ্ঠভাবে সকল ইবাদত উৎসর্গকারী হিসেবে কবুল করুন। আমীন।

সমাপ্ত


[1] মুসলিম: (১৭৩)

[2] বুখারি: (৩২২১), মুসলিম: (৪৮২৮),

[3] ইমাম নববি কর্তৃক “সহি মুসলিমের ব্যাখ্যা” গ্রন্থ: (১৬/১৮৯)

[4] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ: (২/১৪২)

[5] ফায়দুল কাদির: (৫/২৬২)

[6] আবু দাউদ: (৩৫১৪)

[7] তিরমিজি: (১৬৭১), আহমদ: (১৩৬১), ইমাম তিরমিজি রাহিমাহুল্লাহ বলেন: আবু হুরায়রার হাদিস সহি ও হাসান।

[8] মুসলিম: (৩৮৭)

[9] মাজমুউল ফতোয়া: (২৫/৩২৭)

[10] আবু দাউদ: (৩৫১৪), আহমদ: (৫১০৬), ইব্‌ন হিব্বান হাদিসটি সহি বলেছেন। ইব্‌ন তাইমিয়াহ রহ. বলেন: “এ সনদ জাইয়্যেদ”। অর্থাৎ সনদের রাবিগণ গ্রহণযোগ্য। ইকতিদাউস সিরাতুল মুস্তাকিম: (১/২৪০), হাফেজ ইব্‌ন হাজার রহ. বলেন: এ হাদিসটি আবু দাউদ সহি সনদে বর্ণনা করেছেন। ফাতহুল বারি: (১১/৪৪৩)

[11] আলফুরু: (১/৩৪৮)

[12] ইলামুল মুয়াক্কিয়িন: (২/১০৭)

[13] ইগাসাতুল লাহফান

[14] সুবুলুস সালাম: (২০১৮)

[15] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: (২/১৪২)

[16] আরবীতে ‘রাইনা’ শব্দের অর্থ ‘আমাদের তত্ত্বাবধান করুন’। ইহুদিরা শব্দটিকে বিকৃত করে উচ্চারণ করত, যা তাদের ভাষায় (হিব্রুতে) গালি হিসেবে ব্যবহৃত হত।

[17] সূরা নিসা: (৪৬)

[18] সূরা নিসা: (১৪)

[19] সূরা মায়েদা: (১৫৭)

[20] সূরা মায়েদা: (৫১)

[21] আহমদ: (৭৮২৫), সহি ইব্‌ন খুজাইমাহ: (২১৫৫), হাকেম: (১৬৩০), তিনি হাদিসটি সহি বলেছেন।

[22] আবু দাউদ: (১১৩৪), আহমদ: (১৩২১০), হাকেম: (১১২৪), তিনি বলেন: এ হাদিসটি সহি, মুসলিমের শর্ত মোতাবেক, তবে বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেননি। ইব্‌ন হাজার রহ. বলেন: এ হাদিসটি আবু দাউদ ও নাসায়ি রহ. সহি সনদে বর্ণনা করেছেন। বুলুগুল মারাম: (৯৩), ফাতহুল বারি: (৩/১১৩)

[23] ফায়দুল কাদির: (৪/৫১১)

[24] সূরা ফুরকান: (৭২)

[25] খৃস্টানদের ধারণা মতে ঈসা আলাইহিস সালাম যে দিন বায়তুল মাকদিসে প্রবেশ করেছেন, সে দিন তারা ঈদ উৎযাপন করত। সে ঈদের কথা আল্লাহ এখানে বলেছেন। 

[26] সুনানে সায়িদ ইব্‌ন মানসুর: (২৭৯১)

[27] ইকতিদাউস সিরাতুল মুস্তাকিম: (১/৪২৬)

[28] সূরা ফুরকান: (৭২)

[29] ইব্‌ন কাসির: (৬/১৩১)

[30] সূরা মায়েদা: (৫২)

[31] তাফসির ইব্‌ন কাসির: (৩/১৩২)

[32] সূরা তওবা: (৩০)

[33] সূরা মায়েদা: (৭৩)

[34] সূরা মায়েদা: (৭২)

[35] সূরা মায়েদা: (৭২)

[36] সূরা মারইয়াম: (৯১-৯৩)

[37] আহকামু আহলিয যিম্মাহ।

[38] বুখারি: (৪৮২৬), মুসলিম: (৩৪১৪)

[39] ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহুর বাণী নকল করেছেন বায়হাকি রহ., ইব্‌ন তাইমিয়াহ রহ. তার সনদকে সহি বলেছেন।

[40] দেখুন: হাফেজ জাহাবি রহ. কর্তৃক রেসালাহ: تشبه الخسيس بأهل الخميس

[41] সূরা বাকারা: (২০৮)

[42] সূরা আলে-ইমরান: (৮৩)

[43] সূরা সাফফাত: (১০৩)

[44]  সূরা লুকমান: (২২)

[45] সূরা বাকারা: (১৩০-১৩১)

[46] সূরা আলে-ইমরান: (১৯)

[47] সূরা ইউনুস: (৭২)

[48] সূরা আলে-ইমরান: (৬৭)

[49] সূরা বাকারা: (১২৮)

[50] সূরা বাকারা: (১৩৩)

[51] সূরা ইউনুস: (৮৪)

[52] সূরা ইউসুফ: (১০১)

[53] সূরা আলে-ইমরান: (৫২)

[54] সূরা হজ: (৭৮)

[55] সূরা আলে-ইমরান: (৮৫)

[56] সূরা মায়েদাহ: (৩)

[57] সূরা আনআম: (১২৫)

[58] সূরা আলে-ইমরান: (১০২)

[59] সূরা আনআম: (১৬২-১৬৩)

_________________________________________________________________________________________________________________________________

সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব